‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ নিয়ে এবার কর্নাটক হাইকোর্ট স্ত্রীর পক্ষে রায় দিয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় বুধবার স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর আনা বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ বহাল রাখল হাইকোর্ট। এর আগে বিভিন্ন মহল বৈবাহিক ধর্ষণকে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্মতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু, সম্প্রতি বেশকিছু আদালত বৈবাহিক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। 

এই পরিস্থিতিতে কার্যত বৈবাহিক ধর্ষণকে ধর্ষণ বলার পক্ষেই সায় দিল কর্নাটক হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘মানুষ মানুষই। তার কাজ কাজই। ধর্ষণ ধর্ষণই। সেটা কোনো মানুষ স্বামী হিসেবে নারী বা স্ত্রীর প্রতিও করে থাকতে পারেন।’ পাশাপাশি, পর্যবেক্ষণে বিচারপতি আরও জানিয়েছেন, বিয়ে পুরুষকে নৃশংস পাশবিকতার ছাড়পত্র দিতে পারে না।

কর্ণাটক আদালত জানিয়েছে, আইন তৈরি করা আদালতের কাজ নয়। দেশের সংসদ সে কাজ করে। কিন্তু সংবিধান মেনে আদালত বিচার করে। দেশের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, নারী ও পুরুষের সমানাধিকার। ফলে নারী কখনো সম্ভোগের বস্তু হতে পারে না। বিয়ের পরেও না। নারীর অমতে তার স্বামী যদি তার সঙ্গে যৌন মিলনের চেষ্টা করে, তাহলে তা ধর্ষণেরই সামিল। একজন ধর্ষণকারীর যে শাস্তি, স্বামীকেও সেই একই শাস্তি দেওয়া উচিত।

 

এর আগে গত জানুয়ারিতে দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি সি হরিশংকর বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, বৈবাহিক ধর্ষণ প্রাথমিকভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ সম্পর্কে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না। একজন নারীর যৌন স্বাধীনতা, নিজের দেহের ওপর ব্যক্তির সার্বভৌম অধিকার ও না-বলার অধিকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা চলতে পারে না।’

বিচারপতি আরও বলেন, ‘ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ বলে কোনো কিছুর ধারণাই নেই। তাই যেই মুহূর্তে বৈবাহিক ধর্ষণ শব্দবন্ধটি উচ্চারণ করা হচ্ছে, সেই মুহূর্তে আমি একটা ব্যতিক্রমকে তুলে ধরছি, যা আজও চলে আসছে। যেই মুহূর্তে এটিকে ধর্ষণ বলা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা এখানে প্রযোজ্য হচ্ছে। আর তা যদি হয়, তাহলে বৈবাহিক হোক বা না-ই হোক বা অন্য কিছু হোক, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

আবার গত আগস্টে কেরালার হাইকোর্ট জানিয়েছিল, বৈবাহিক ধর্ষণ বিবাহে বিচ্ছেদ চাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে। একটি মামলার রায়দান করতে গিয়ে পর্যবেক্ষণে কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি মহম্মদ মুস্তাক ও বিচারপতি এডাপ্পাগাথের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ‘একজন স্ত্রীর সম্মতি উপেক্ষা করে স্বামীর অবৈধ আচরণ বৈবাহিক ধর্ষণ বলেই বিবেচ্য। তথাপি এ ধরনের আচরণের কোনো শাস্তি দেওয়া যায় না। কিন্তু একে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের আওতায় রাখা হয়। শুধু আইন ও দণ্ডবিধি বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের স্বীকৃতি দেয় না বলে, সেটা কখনও আদালতকে আটকাতে পারে না একে নির্যাতন হিসেবে বিচার করে বিবাহ-বিচ্ছেদ হিসেবে গণ্য করতে।’

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পিটিআই, এনডিটিভি